যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন সংক্ষিপ্ত সফরে মিয়ানমারে গিয়ে দেশটির সামরিক বাহিনীকে (তাতমাদো) কড়া বার্তা দিয়েছেন ।নেপিডোতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চিকে সঙ্গে নিয়ে  যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের লাগামহীন নির্যাতন-নিপীড়নের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে।

বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তিনি মিয়ানমার সামরিক বাহিনীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বেসামরিক সরকারের অঙ্গীকারগুলোর প্রতি সম্মান জানানো, সেগুলো বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করা এবং রাখাইন রাজ্যে সব ব্যক্তির নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব। ’




টিলারসন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আলোচনাকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে উল্লেখ করেন। সীমানার ভেতর থাকা সবাইকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোকে তিনি আহ্বান জানান।


রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগকে ‘এককথায় ভয়ংকর’ হিসেবে উল্লেখ করলেও টিলারসন নিপীড়নের জন্য পুরো মিয়ানমারের ওপর অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার পক্ষে মত দেন। সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিশেষের ওপর অবরোধ আরোপকেই যথার্থ বলে তিনি মন্তব্য করেন। অন্যদিকে রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে নীরবতা পালন নিয়ে বৈশ্বিক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্টেট কাউন্সেলর সু চি বলেছেন, ‘আমি নীরব নই। ’


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংক্ষিপ্ত সফরে গতকাল বুধবার মিয়ানমারে গিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশটির ওপর চাপ বাড়িয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। এর আগে গত মঙ্গলবারই ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় সু চির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন তিনি।

গতকাল সকালে নেপিডোতে পৌঁছে টিলারসন আলাদা বৈঠক করেন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে। প্রায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সু চির সঙ্গে টিলারসনের দুই দফা বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটই সবচেয়ে গুরুত্ব পায়।




নেপিডোতে সু চিকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে টিলারসন বলেন, ‘মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের ব্যাপক নৃশংসতার বিশ্বাসযোগ্য খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নিরাপত্তা বাহিনীগুলো তাদের সহযোগীদের অবাধে নৃশংসতা চালাতে দিয়েছে। ’


স্কাই নিউজ জানায়, রোহিঙ্গা নিপীড়নকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ হিসেবে অভিহিত করা হবে কি না সে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র তাদের মতো করে মূল্যায়ন করছে বলেও জানান টিলারসন। এ মুহূর্তে পুরো মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরামর্শ না দেওয়ার ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সাফল্য, গণতান্ত্রিক বিকাশ দেখতে চাই। ’ তবে টিলারসন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেননি। তিনি বলেছেন, ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে ‘টার্গেটেড স্যাংশান্স’ই (ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে অবরোধ) যথার্থ হতে পারে। রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতিশ্রুত ৪০ কোটি ৭০ লাখ ডলার সহায়তার কথাও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন।


অন্যদিকে অং সান সু চি বলেন, ‘লোকজন যে কেন বলে আমি নীরবতা পালন করছি, তা জানি না। আমি নীরব নই। লোকজন যা বোঝাতে চায় তা হলো, আমি যা বলি তা তত আকর্ষণীয় নয়। ’ সু চি বলেন, তিনি চেষ্টা করেছেন যাতে নৃগোষ্ঠীগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে না নামে।


কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নেপিডোতে টিলারসনের বক্তব্য অত্যন্ত বাস্তবসম্মত। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতি নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটন সু চির সরাসরি সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকছে। কারণ ওয়াশিংটন মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ওপর সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করছে।


এদিকে গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কমনস সভায় এক আলোচনা পর্বে মানবাধিকার সংগঠনগুলো যুক্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অং সান সু চিকেও রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন সমস্যার অংশ হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্রিটিশ এমপিরা অভিযোগ করেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞ প্রক্রিয়ায় সু চিও জড়িয়ে গেছেন। বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকের পরিচালক মার্ক ফার্মনার বলেন, সু চি সামরিক অভিযানের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।


জাতিসংঘে আজ ভোট : এদিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটিতে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর আজ বৃহস্পতিবার আলোচনা ও ভোট অনুষ্ঠিত হতে পারে। ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে মিসর এ প্রস্তাব এনেছে। ওই প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া ও নাগরিকত্ব প্রদানের কথা রয়েছে। বাংলাদেশ আশা করছে, ওই প্রস্তাব গৃহীত হবে। এর ফলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ আরো বাড়বে।http://www.banglanewsdesk.com/