বাংলা নিউজ ডেস্ক:

 মাসুম হোসেন, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ


 বগুড়া শাজহানপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশের অবসর প্রাপ্ত এসআই নুরুন্নবী রাষ্টীয় মর্যাদা ছাড়াই চির নিদ্রায় শায়িত হলেন। উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান দিতে অবহেলা করেছে। অপরদিকে স্থানীয় সাংবাদিকরা শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে  জাতির হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন।


জানাযায়, বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলার শাকদহ গ্রামের মৃত-মাছির উদ্দীনের পুত্র মোঃ নুরুন্নবী।


তৎকালীন পাকিস্থান আমলে ১৯৬৬ সালে তিনি পাবনা জেলায় পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে স্বধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি থানা থেকে ৩টি অস্ত্র চুরি করে পালিয়ে এসে ভারতের দার্জিলিংয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহন করেন। যুদ্ধের প্রশিক্ষণ শেষে রংপুর জেলার চিলমারি এলাকায় ৬নং সেক্টরের প্লাটুন কমান্ডারের দাঁয়িত্ব নিয়ে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।  স্বাধীনতা অজর্নের  পর তিনি আবারো পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ২০০০ সালে তিনি ঠাঁকুরগাও সদর থানা থেকে অবসরে আসেন। সারিয়াকান্দিতে নদীগর্ভে তাঁর ভিটে মাটি গ্রাস হলে তিঁনি বগুড়া শহরের নারুলীতে জমি কিনে বাড়ি নির্মান করে বসবাস করেন। এক বছর পূর্বে শহরের বাড়ি বিক্রয় করে শাজাহানপুর উপজেলার ডোপনপুকুর গ্রামের জায়দারপাড়ায় বাড়ি নির্মান করে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর ছেলে তুহিন রংপুর জেলায় পুলিশ কনস্টেবল হিসাবে কর্মরত রয়েছে। ছেলের চাকুরীর সুবাদে তিঁনি রংপুরে ছেলের কাছে থাকতেন। তিঁনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। ছেলে তুহিন চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বুধবার সকাল ১০টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮বছর। তাঁর ছেলে তুহিন ওই দিনই এ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁর লাশ বগুড়া শাজাহানপুর বাড়িতে নেওয়ার আগে থানায় নিয়ে ছিলেন। শাজাহানপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক(সার্বিক)জিয়া লতিফুল ইসলামকে মরহুম মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিয়ে শাজাহানপুরে নিজ এলাকায় দাফন করা হবে জানিয়ে লাশ নিয়ে বাড়িতে আসেন। বাড়িতে এসে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় লাশ দাফনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু সন্ধ্যা হলেও প্রশাসনের দেখা না মেলায় নিজেরাই লাশ দাফন করেন। অপরদিকে গত শুক্রবার রাতে বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিকদের নিয়ে  মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুরুন্নবীর বাড়িতে গিয়ে শোক সন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনা জ্ঞাপন করে জাতির পক্ষে ক্ষমা প্রার্থনা করেন সাংবাদিক সাজেদুর রহমান সবুজ। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাংবাদিক আরিফুর রহমান মিঠু, জিয়াউর রহমান, শরীফুল ইসলাম পান্না, মাসুম হোসেন, আনোয়ার হোসেন, রুমেল আশরাফ শিপলু, সানোয়ার হোসেন প্রমূখ।


বগুড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রুহুল আমীন মোবাইল ফোনে জানান, শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং শাজাহানপুর থানার ওসির অবহেলার কারনে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন হয়েছে।


শাজাহানপুর উপজেলার সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) এর সহ-সভাপতি এম শাহীন আলম বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবীর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন না হওয়ায়  তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, শাজাহানপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক হলে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধার লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হতো।


বগুড়া সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল কাদের মোবাইল ফোনে জানান, বুধবার সারিয়াকান্দি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কুদ্দুসের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নিশ্চিৎ হয়ে সাথে সাথে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।


শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান জানান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাজাহানপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের মাধ্যমে তাকে নিশ্চিৎ করবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে কেউ তাকে কিচ্ছু জানায় নাই। জানালে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতেন। শাজাহানপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তাকে বলেছেন নুরুন্নবী নামে শাজাহানপুর উপজেলায় কোন মুক্তিযোদ্ধা নাই।